মাগুরা প্রতিদিন ডেস্ক : শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জে অইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গি কাজী ফজলে রাব্বির লাশ তার পৈত্রিক বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল গ্রামে দাফন করা হবে এমন খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কেউ-কেউ লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে রাব্বির লাশ বেরইল গ্রামে দাফন করা হবে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেনি সেখানে থাকা তার স্বজনরা।
বেরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা খন্দকার মহব্বত আলী জানান, গ্রামে বসবাসকারী তার এক চাচা মুক্তিযোদ্ধা অন্য এক চাচা আওয়ামীলীগের কর্মী।তবে মাঝেমধ্যে বাড়ি আসলেও চাকরীর সুবাদে রাব্বির বাবা কাজী হাবিবুল্লাহ দীর্ঘ দিন ধরে স্থায়ীভাবে যশোরে বসবাস করেন। যে কারনে তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই। মিডিয়াতে প্রচারের পর তারা জানতে পারেন জঙ্গি রাব্বি যশোর উপশহর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজি হাবিবুল্লাহর ছেলে। যার মূল বাড়ি মাগুরার বেরইল গ্রামে।
সোমবার সন্ধ্যা থেকে এলাকায় খবর আসে রাব্বির লাশ রেইল গ্রামে দাফন করা হবে।এমন খবরে এলাকার অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ-কেউ ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। আবার লাশ দাফনে বাধা দেওয়া হবে এ কথাও কেউ বলেছেন। রাব্বির চাচারাও চাননা এখানে তার লাশ দাফন হোক। তবে ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মহব্বত এ ব্যাপারে তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, জঙ্গি কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্তরা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, দেশ ও জাতির শত্রু। যে কারণে এ ধরনের ব্যক্তিদের দাফন বেরইলে মাটিতে হোক তা তিনি চান না। তিনি বেরইল গ্রামে তার লাশ দাফনে বাধা দেবেন বলে জানান।
মাগুরা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, বিগত দিনে ৭১-এ মাগুরার কসাই চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুখ্যাত রাজাকার রিজু’র লাশ দাফনে তারা যেমন মাগুরায় প্রতিহত করেছিলেন। তেমনি মাগুরার মাটিতে জঙ্গি রাব্বির লাশ দাফনেও বাধা দেবেনা। গুলশান ও শোলাকিয়া হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত জঙ্গিদের লাশ মাগুরার মাটিতে দাফন হোক এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
বেরইল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন মোল্যা, জবেদ আলী, আব্দুল মান্নান, খন্দকার লায়েক আলীসহ একাধিক এলাকাবাসি বলেন, কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে জঙ্গী রাব্বির ইসলাম ও দেশের শত্রু তার লাশ গ্রামের বাড়ি (বেরইল) এনে দাফন করা হবে বলে তারা শুনেছেন। কিন্তু কোন কুলাঙ্গারের লাশ বেরইলের মাটিতে তারা দাফন করতে দেবে না।
বেরইল গ্রামে বসবাসকারী নিহত জঙ্গি রাব্বির ছোট চাচা কাজী রবকতউল্লাহ জানান, এ ব্যাপারে রাব্বির বাবা কাজী হাবিবুল্লাহ তাদের কিছু জানাননি। তবে নানা মাধ্যমে তাদের কানে এসেছে রাব্বিকে বেরইলে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বাবা। যেহেতু এখানে তাদের যাতায়াত আছে। বাড়িঘর জমিজমা রয়েছে, সেহেতু এ ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রাব্বির লাশ বেরইল গ্রামে দাফন হোক এটা তিনি চান না।
কাজী বরকত উল্লাহ আরো জানান, ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। রাব্বির বাবা কাজী হাবিবুল্লাহ মেঝ। তিনি যশোর উপশহর কলেজে শিক্ষকতার সুবাদে সেখানে বাড়ি করে বসবাস করেন। তবে বিভিন্ন ফসল আদির সময় সহ পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে মাঝে মধ্যে তিনিসহ তার পরিবারের অন্যরা বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা কাজী গোলাম কবির বিদ্যুৎ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী। পরের ভাই কৃষক কাজী আমান উল্লাহ বাড়িতে থাকেন। অপর ভাই কলেজ শিক্ষক কাজী নূর নবী পরিবার নিয়ে যশোরে থাকেন। অন্য ভাই কাজী শরিয়তউল্লাহ কিশোরগন্জের ভৈরব মহিলা কলেজের শিক্ষক।
দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রাব্বির সবার ছোট। দুই বোন ফেরদৌসি’র কয়েক বছর অগে ও অপর বোন তাসলিম-এর দুই-তিন মাস আগে বিয়ে হয়েছে বলে জানান বরকত উল্লাহ।